ডেঙ্গু ঠেকাতে আধুনিক ফাঁদ ডিএনসিসির
প্রতি বছর এডিস মশার থাবায় প্রাণ হারায় মানুষ। তাই ডেঙ্গুজ্বর ঠেকাতে আগাম পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসি এলাকায় ১ হাজার হটস্পট শনাক্ত করে মশক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। আধুনিক ফাঁদ বসিয়ে মশক নিধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ৫ হাজার শিক্ষার্থী।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে থার্ড পার্টিকে দিয়ে মশক নিধনের কাজ করানো হতো। এতে অনেক সময় মশার ওষুধ না ছিটানো, সময়মতো না যাওয়ার ঘটনা ঘটত। এটা যেহেতু জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় তাই এখানে অবহেলার সুযোগ নেই। এজন্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। মশার ওষুধ ছিটানো, মশক নিধনে জনবল কোথায় কীভাবে বণ্টন করা হবে এগুলো সেনাবাহিনী দেখবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে সচেতনতা কার্যক্রমে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব শিক্ষার্থী সংগঠন রয়েছে তাদের মাধ্যমে আসা শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমরাও সরাসরি এবং অনলাইনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মশা প্রজননের ১ হাজার ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। মশক নিধনে আধুনিক ফাঁদের ব্যবস্থা করেছি। যেসব জায়গায় জলাধার বেশি এবং মশার আনাগোনা বেশি যেমন, উত্তরা, খিলক্ষেত, যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে মশক নিধনের আধুনিক ফাঁদ স্থাপন করা হবে। এবার আক্রান্ত ও প্রাণহানি প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার করতে হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নয়জন। ডেঙ্গুর মৌসুম না হলেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চলতি বছরে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ১৯২ জন, মারা গেছে ১৬ জন। ডেঙ্গুর মৌসুম না আসতেই আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, মারা গেছে ৫৭৫ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি আঘাত হানে। ওই বছর আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ২০২৩ সালে দেশে ২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। ওই বছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু রোগী। ৬৪ জেলাতেই এডিস মশার অস্তিত্ব ও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় এখন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিতে এডিস মশার জরিপ হয় প্রতি বছর তিনবার-বর্ষার আগে, বর্ষার সময় ও বর্ষার পরে। এডিস মশার ঘনত্ব দেখে আগাম ধারণা পাওয়া যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটুকু হবে। এসব জরিপ হয় মূলত ঢাকার দুই সিটিসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে। এ বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপারেশনাল কর্মসূচি (ওপি) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে মশার জরিপ হয়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ষার আগে লার্ভা পরিস্থিতি জানতে জরিপটি পরিচালনা করেছে। তবে এখনো ফল প্রকাশ করেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যে কোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করবে।’